সোনাতলায় মাদক সংক্রান্ত কিছু তথ্য
———————————————-
আমরা আজ এমনই এক রূঢ়,নিষ্ঠুর সময়ের মুখোমুখি এসে দাড়িয়েছি । শিকার হয়েছি এক গভীর ষড়যন্ত্রের । যুদ্ধের বিজ্ঞান আজ জটিল থেকে জটিলতম । জীবানু যুদ্ধ,রাসায়নিক যুদ্ধের পর এবার নেশার যুদ্ধ । এ নেশা মাদকের । এই নেশার কবলে পড়েছে হাজার হাজার তরুন । এমনি করেই চলছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মৃতকল্প,অসাড় করে দেয়ার পরিকল্পনা । তরুন যুবশক্তিই দেশের প্রাণ । ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে । দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে,শহরতলীতে,গ্রামে-গ্রামান্তরে । গোটা দেশের ন্যায় অত্র বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলাটিও মাদকের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেনি । ভাইরাসের ন্যায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে অত্র উপজেলাতে । বিশেষ করে অত্র উপজেলার গড়ফতেহপুর,কাবিলপুর,রানীরপাড়া,কানুপুর,বালুয়াহাট,চড়পাড়া,কলেজ স্টেশন,সোনাতলা রেলস্টেশন,গড়চৈতন্যপুর,হরিখালি বাজার,পাকুল্লাহ,শাহবাজপুর,কর্পূর বাজার উল্লেখ করার মতো । এসব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কল্যাণে মাদক ব্যবস্যা যেমন জমজমাট ,ঠিক তেমনি এলাকার উঠতি তরুন সমাজও আকৃষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত । এসব মাদকদ্রব্যর মধ্যে বর্তমানে হেরোইন ও ইয়াবার বিস্তার ও ব্যবহার এতোটাই ভয়াবহ সর্বগ্রাসী রূপ ধারন করেছে যে,উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন না করলে এর ভয়াবহ পরিনতি যে কি হবে তা বলা প্রায় অসম্ভব । সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আলোর প্রদীপ পরিবার দীর্ঘ ১০ বছর যাবত মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে । পাশাপাশি অত্র উপজেলার মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি মাদক বিক্রেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যাবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন । কখনো কিছু প্রতিকার মিলেছে আবার কখনো মানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনের উদাসীনতা মূলক মনোভাব আমাদের হতাশায় ডুবিয়েছে । জনস্বার্থে অত্র উপজেলার মাদক সংক্রান্ত কিছু তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হলোঃ-
উপস্থাপিত সকল তথ্য সংগঠনের নিজস্ব জরিপ ও অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে তৈরিকৃতঃ-
সোনাতলা উপজেলার মোট জনসংখ্যাঃ- ১,৬৭,৫৪৭ জন প্রায় ।
পুরুষঃ- ৮৫,৮৬২ জন (প্রায়) ।
নারীঃ- ৮২,৩৪১ জন (প্রায়) ।
১। অত্র উপজেলায় মোট ধূমপায়ীর সংখ্যা ( মোট জনসংখ্যার উপর পরিচালিত জরিপের গড় হিসাব )ঃ- ৬৩.৩৮% শতাংশ প্রায় ।
২। ইয়াবা সেবীর সংখ্যাঃ- ০.৭৯% শতাংশ প্রায় ।
৩। ড্যান্ডি নামক মাদকসেবীঃ- ০০.১৯% শতাংশ প্রায় (তবে এই মাদক সেবীদের মধ্যে ১২-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই অধিক) ।
৪। হেরোইন সেবীর সংখ্যাঃ- ০০.৭৪% শতাংশ প্রায় ।
৫। ইয়াবা ও হেরোইন দুটোতেই আসক্তঃ- ০০.৮৩% শতাংশ প্রায় ।
৬। ফেন্সিডিল সহ অন্যান্য মাদক সেবীর সংখ্যাঃ- ০০.৬৫% শতাংশ প্রায় ।
মোট মাদক সেবীর সংখ্যা (ধূমপায়ীর সংখ্যা বাদ দিলে)ঃ – ০৩.২% শতাংশ প্রায় ।
বিক্রিত মাদকের ধরনঃ- ৫ প্রকার ।
মাদক বিক্রির স্থান (ভ্রাম্যমান বাদে)ঃ-
সোনাতলার প্রায় ২২ টি পয়েন্ট সহ ভ্রাম্যমান মাদকচক্র সক্রিয়ভাবে তাদের ব্যবস্যা চালিয়ে যাচ্ছে । এর সাথে কিছু লোভী সাধু সুশীল আর অসাধু প্রশাসনিক কর্মচারীদের ম্যানেজ করে চলছে এসব ব্যবস্যা ।
মাদক ব্যবস্যার কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ২২টি । তার মধ্যেঃ-
১। গড়ফতেহপুর – ৬ টি ( যার মধ্যে হেরোইন ৩ টি,ইয়ায়াবা ২ টি, ইয়ায়াবা+ফেন্সিডিল ১ টি )।
২। কানুপুর – ৩ টি (ফেন্সিডিল ২ টি, ইয়াবা ১ টি ) ।
৩। বালুয়াহাট – ৪ টি (ফেন্সিডিল ১ টি, ইয়াবা ২ টি, হেরোইন+গাজা ১ টি)।
৪। চড়পাড়া – ৩ টি (ইয়াবা ২ টি,হেরোইন+গাজা ১ টি)।
৫। কাবিলপুর – ৩ টি (হেরোইন ১ টি,গাজা ২ টি)।
৬। কলেজস্টেশন – ৩ টি ( ইয়াবা ১ টি,ফেন্সিডিল+হেরোইন ১ টি,গাজা ১ টি)।
৭। সোনাতলা বাজার+রেলস্টেশন – ৩ টি (হেরোইন+ইয়াবা ২ টি,গাজা ১ টি)।
৮। শাহবাজপুর – ২ টি ( হেরোইন+ইয়াবা ১টি,দেশীয় মদ ১টি)।
৯। হরিখালি বাজার – ৩ টি ( হেরোইন ১ টি, ইয়াবা ১ টি,গাজা ১ টি)।
১০। গড়চৈতন্যপুর- ১ টি (ইয়াবা ১ টি) ।
১১। পাকুল্লাহ – ৩ টি ( ইয়াবা ১ টি,হেরোইন+ইয়াবা ২ টি)।
১২। কামার পাড়া – ১ টি (ইয়াবা) ।
১৩। কর্পূর বাজার – ১ টি (ইয়াবা) ।
এছাড়াও আমাদের তথ্যর বাইরে আরো কেন্দ্র থাকতে পারে বলে আমরা মনে করি ।
মাদক প্রতিরোধে সংগঠনের কতিপয় সুপারিশমালাঃ-
১। প্রত্যক জুম্মার নামাজের খুৎবার আগে অথবা পরে অন্তত ৩/৪ মিনিট ইমামের মাধ্যমে মাদকের নানাবিদ কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা । অর্থ্যাৎ জনসাধারন যেন বুঝতে বা আমলে নিতে সক্ষম হয় মাদক একটি মারাত্বক সমস্যা আমাদের প্রত্যকের জন্য ।
২। জনবহুল স্থানে মাদকের কুফল সম্পর্কে ও মাদক বিক্রেতার আইনত শাস্তির ধরন এবং মাদক সেবীদের সাজার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ পূর্বক জনসচেতনতা মূলক প্যানা টাঙ্গানো ।
৩। সপ্তাহে অন্তত একবার মাইকে মাদকের কুফলতা সম্পর্কে প্রচার ও হাতে হাতে প্রচারপত্র বিলিকরন ।
৪। জনবহুল স্থানে মাদক বিরোধী পথ নাটক,ডকুমেন্টরি প্রদর্শনের ব্যাবস্থা করা ।
৫। বিভিন্ন রাজনৈতিক শুভেচ্ছা স্বম্বলিত প্যানায় মাদক বিরোধী শ্লোগান সংযুক্ত করে প্রচার ।
৬। স্কুল,কলেজ গুলোতে মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন পরিচালনা ।
৭। প্রবন্ধ,রচনা,চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন সহ নানামূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিকাশ ।
৮। নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন ও মাদকবিরোধী প্রচারনা চালানো ।
৯। চিহ্নিত মাদক সেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত উদ্যাগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষন,চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করা ।
১০। দলমত নির্বিশেষে সকল মাদক বিক্রেতা ও মাদক এর ডিলারদের গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান । এবং পরবর্তিতে তাদের জীবনযাপনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা ।
১১। সকল মাদক বিক্রেতাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা ও পাড়ায় পাড়ায় মাদক বিরোধী সেল বা কমিটি গঠন । সেখানে তরুন সমাজ কে প্রাধান্য দেয়া ।
জনস্বার্থে –
তথ্য,প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি
আলোর প্রদীপ
কাবিলপুর,সোনাতলা,বগুড়া ।